07 November 2020

নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বের করা হবে বলে জানিয়েছে জো বাইডেনের প্রচার শিবির

 


মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর তা না মানলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিরাপত্তাকর্মীদের দিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বের করা হবে বলে জানিয়েছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের প্রচার শিবির। তবে তার আগে ট্রাম্প ও তার দলকে হোয়াইট হাউস ত্যাগের সহজ রাস্তা দেখানো হবে বলেও উল্লেখ করেছে বাইডেন শিবির। 


আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অনুমিতভাবেই জোর লড়াই হচ্ছে। এ লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত জো বাইডেন এগিয়ে। আর পুনর্নির্বাচনের পথে পিছিয়ে পড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা ধরনের বাহানা তৈরি করছেন। আদালতের শরণও নিয়ে ফেলেছে তার প্রচার শিবির। 

এ অবস্থায় বাইডেনের প্রচার শিবিরের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, যদি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনে পরাজয়ের পরও তা মেনে নিতে নারাজ হন ট্রাম্প, তবে তাকে নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসের বাইরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

নির্বাচনের এখন পর্যন্ত পাওয়া ফল অনুযায়ী জো বাইডেনের ২৫৩ ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২১৪টি ইলেকটোরাল পাওয়া নিশ্চিত। কিন্তু প্রেসিডেন্সি গঠনের জন্য একজন প্রার্থীর প্রয়োজন ২৭০টি ইলেকটোরাল ভোট। এখনো মোট ছয়টি অঙ্গরাজ্যে ভোট গণনা সম্পন্ন হয়নি। 

এগুলো হলো আলাস্কা, অ্যারিজোনা, নর্থ ক্যারোলাইনা, নেভাদা, পেনসিলভানিয়া ও জর্জিয়া। এই ছয় অঙ্গরাজ্যে মোট ৭১টি ইলেকটোরাল ভোট রয়েছে। এর মধ্যে আলাস্কার ৩টি ইলেকটোরাল ভোট ট্রাম্পের পাওয়া নিশ্চিত ধরা যায়। ফলে বাকি ৬৮টি ইলেকটোরাল ভোট নিয়েই চলছে মূল লড়াই, যেখানে বাইডেন বেশ স্বস্তিকরভাবেই এগিয়ে রয়েছেন।

এদিকে বাইডেনের এই এগিয়ে থাকাকে ‘জালিয়াতি’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠরা। এর আগে নির্বাচনে পরাজিত হলে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো নিশ্চয়তা দিতেও অস্বীকার করেছিলেন ট্রাম্প। 

এখন যেসব অঙ্গরাজ্যে তিনি পিছিয়ে পড়ছেন, সেসব অঙ্গরাজ্যে জালিয়াতি হচ্ছে বলে নানা বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। ফলে নির্বাচনে পরাজিত হলে ট্রাম্প সে ফল মেনে নেবেন না বলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটেই বাইডেনের প্রচার দল থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জর্জিয়া ও পেনসিলভানিয়াতে এগিয়ে যাওয়ার পর বাইডেনের জয় নিয়ে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় ট্রাম্প সরাসরি দাবি করেছেন, প্রতারণার মাধ্যমে তার পুনর্নির্বাচন ঠেকিয়ে দিচ্ছে ডেমোক্র্যাটরা।

এই প্রেক্ষাপটে বাইডেনের প্রচার শিবিরের মুখপাত্র অ্যান্ড্রু বেটস বলেন, ‘গত ১৯ জুলাই আমরা বলেছিলাম—মার্কিন জনগণই নির্বাচনের ফল নির্ধারক। আর মার্কিন সরকার অনুপ্রবেশকারীদের হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।’

গত জুলাই মাসেই ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলে সেই ফল মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো নিশ্চয়তা দিতে তিনি অপারগ।

অন্যদিকে মার্কিন নির্বাচন এরই মধ্যে ভীষণ উত্তেজনাকর অবস্থায় পৌঁছে গেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর হিসাবমতে, জো বাইডেন ২৫৩ ও ট্রাম্প ২১৪ ইলেকটোরাল ভোট পাওয়া নিশ্চিত। মুশকিল হলো এর পরের হিসাব নিয়েই। 

ইলেকটোরাল কলেজের ৫৩৮ ভোটের মধ্যে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে প্রয়োজন ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট। কিন্তু জর্জিয়া (১৬), পেনসিলভানিয়া (২০), নেভাদা (৬), নর্থ ক্যারোলিনা (১৫) ও অ্যারিজোনায় (১১) যেভাবে ফল পাল্টাচ্ছে, তাতে আগে থেকে কিছু বলবার আর সুযোগ নেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, এর মধ্যে নর্থ ক্যারোলিনা ছাড়া আর সব জায়গায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। নর্থ ক্যারোলিনায় বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প ৭৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে। শতাংশের হিসাবে এই ব্যবধান ১ দশমিক ৪ শতাংশের মতো। কিন্তু অঙ্গরাজ্যটিতে এখনো সম্ভাব্য মোট ভোটের ৫ শতাংশ গণনার অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে জর্জিয়ায় বাইডেন ট্রাম্প থেকে ১ হাজারের কিছু বেশি ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। সেখানকার নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ভোট পুনঃগণনার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। 

নেভাদায় বাইডেন ট্রাম্প থেকে ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও সেখানে এখনো ৮ শতাংশ ভোটের গণনা বাকি রয়েছে। পেনসিলভানিয়ায় বাইডেন এগিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে তাঁর জয়ের জোর সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের সম্ভাবনা এখনো মিলিয়ে যায়নি। কারণ, অঙ্গরাজ্যটিতে বাইডেন ট্রাম্প থেকে দশমিক ২ শতাংশ বেশি ভোট পেলেও এখনো গণনার বাকি রয়েছে ৪ শতাংশ ভোট। 

আর বাকি থাকল অ্যারিজোনা। অঙ্গরাজ্যটিতে বাইডেন ট্রাম্প থেকে ৪৩ হাজার  ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন, যা শতাংশের হিসাবে মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ। অথচ সেখানে এখনো সম্ভাব্য মোট ভেটের ৭ শতাংশই গণনা বাকি।