মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে মঙ্গলবার। কিন্তু গণনা শেষ না হওয়ায় ভোটের ফল এখনও ঝুলে আছে। যদিও এখন পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের জয়ের আভাস স্পষ্ট। সম্ভাব্য জয় পাওয়ার সেই মুহূর্তে জনতার সামনে এলেন ডেমোক্রেটপ্রার্থী জো বাইডেন। এসেই জনতার উদেশে দৃঢ়কণ্ঠে বললেন, ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যাগুলোই বলে দিচ্ছে আমরা জিততে চলছি, এবং এটা এখন স্পষ্টই বলা যায়।
শুক্রবার রাতে নিজ অঙ্গরাজ্য ডেলাওয়ারের উইনমিংটন থেকে দেওয়া সাত মিনিটের এই ভাষণে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে ভোট ঘিরে তিক্ততা ভুলে সামনে তাকাতে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে দাঁড়াতে আহ্বান জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ হলেও এখনও কয়েকটি রাজ্যের গণনা শেষ হয়নি; এসব রাজ্যের বেশিরভাগে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও পোস্টাল ব্যালট গণনা যতই গড়িয়েছে, তা সামনে এগিয়ে দিয়েছে বাইডেনকে।
বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল নাগাদ জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, পেনসিলভেনিয়া ও নেভাদায় সর্বশেষ ফল বাইডেনের ২৭০ ইলেকটোরাল ভোট জয় প্রায় স্পষ্ট করে তুলেছে; যদিও এই গণনা নিয়ে আদালতে যাচ্ছে ট্রাম্প শিবির।
ব্যাটেলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলোর সবশেষ ফল দেখিয়ে তিনি বলেন, “২৪ ঘণ্টা আগে আমরা পেনসিলভেনিয়ায় পিছিয়ে ছিলাম আর এখন আমরা পেনসিলভেনিয়া জয় করতে যাচ্ছি। আমরা অ্যারিজোনায় জয়ী হচ্ছি, নেভাদায় জয়ী হচ্ছি, নেভাদায় দ্বিগুণ ভোটে এগিয়ে গেছি আমরা।
“বৃহস্পতিবার থেকে কী ঘটেছে, শুধু তার দিকে তাকান। ২৪ ঘণ্টা ধরে জর্জিয়ায় আমরা পিছিয়ে ছিলাম, এখন আমরা এগিয়ে আর এই রাজ্য আমরা জয় পেতে যাচ্ছি। আমরা ৩০০ ইলেকটোরাল ভোটের পথে আছি। আমরা সাত কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোট পেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে যে কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পাওয়া ভোটের চেয়েই এটি বেশি। জাতি আমাদের সঙ্গে আছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তিন দিন বাদে বাইডেনের এই ভাষণ দেওয়ার কথা ছিল বিজয়ী হিসেবে। কিন্তু স্মরণকালের ঘটনাবহুল এই নির্বাচনের পর এখনও গণনা শেষ না হওয়া এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্যে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জনগণের সামনে আসতে হয়েছে বাইডেনকে।
ভোটে নিজেকে বিজয়ী- এমন স্পষ্ট কোনো ঘোষণা ডেমোক্র্যাট প্রার্থী না দিলেও তার কথামালায় সাত মিনিটের যে বক্তৃতা সাজিয়েছিলেন, তাতে কিছু বলতে বাকিও রাখেননি।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হতে চলেছেন ৭৭ বছর বয়সী বাইডেন। সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে পারলে বারাক ওবামার সাথে দুই বারের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন হবেন দেশটির সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট।
এদিকে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য নিজের রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক সেরে ফেলার কথা জানিয়ে বাইডেন বলেছেন, এই ভোট তাকে করোনা ভাইরাস মহামারি, অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলার ‘নির্দেশ দিয়েছে’।
বাইডেন যখন এতটা এগিয়েছেন, জর্জ বুশের (সিনিয়র) পর পরাজয়ের মুখে থাকা প্রথম প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন আদালতে নেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে ডেমোক্র্যাট শিবিরের উদ্দেশে বলেছেন, খেলা এখনও শেষ হয়নি।
করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে তিক্ততার চরম প্রকাশ যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্ত করে দিয়েছিল, যা ভোটগ্রহণের পরও তার রেশ চলছে। জাতির মধ্যে যে বিভেদ দেখা দিয়েছে স্বীকার করে নিয়ে ভোটের শেষে তিক্ত অতীত ভুলে সামনে তাকাতে যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী।
“কঠিন একটা নির্বাচনের পরও উত্তেজনা চলছে। তবে আমি বলব, রাগ-বিরাগ পেছনে ফেলে রাখতে। আমাদের সামনে বড় সমস্যা, এখন দলাদলির সময় নয়। আর আমরা প্রতিপক্ষ হতে পারি, তবে পরস্পরের শত্রু নই,” রিপাবলিকানদের উদ্দেশে বলেন বাইডেন।
সবশেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রবাসীকে গণতন্ত্রের উপর আস্থা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, “আমরা আবার প্রমাণ করছি, যুক্তরাষ্ট্রে আমরা ২৪৪ বছর ধরে প্রমাণ করে আসছি, গণতন্ত্র এখানে কার্যকর। আপনার ভোট অবশ্যই গোণা হবে। এটি বন্ধ করার জন্য লোকজন কত চেষ্টা করল, তা গ্রাহ্য করি না আমি। ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন, ঈশ্বর আমাদের সেনাদের মঙ্গল করুন।”