রাজধানীর মহাখালীর সাত তলা বস্তির ভয়াবহ আগুনে প্রায় দেড়শ বস্তির ঘর ও দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। বস্তির অনেকেই তাদের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এক ঘণ্টার আগুনে বস্তিবাসীর চোখের সামনে মুহূর্তেই পুড়ে যায় তাদের স্বপ্ন। রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ১২ ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেন। তবে আগুনের কারণে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ভুক্তভোগী আনিস শেখ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘রাতে যখন খাওয়া দাওয়া করে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ঠিক তখনই দাওদাও করে আগুন লাগে। মুহূর্তের আগুন ছড়িয়ে যায় তার ঘরে। পরে পরিবার নিয়ে প্রান নিয়ে কোনও মতে ঘর থেকে বের হতে পারলেও পুড়ে গেছে তার ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে চাল, ডাল ও জামাকাপড়ও ‘
আসমা বানু নামে বস্তির এক দোকানী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘দোকানে প্রায় লাখ পাঁচেক টাকার জিনিসপত্র ছিল কিন্তু দোকান থেকে কিছুই সড়াতে পারেনি। আগুন লাগার সময়ে তিনি ঘরে ছিলেন। পরে আগুন লাগার খবরে বাইরে এসে দেখি চোখের সামনে দোকান পুড়ে যাচ্ছে। এ কষ্ট আমার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট।’
কাঁচামালের দোকানদার ফানিফ ব্যাপারী ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘নগদ ৫০ হাজার টাকা, তিন গাড়ি মালামাল, ঘরের আসবাবপত্রসহ সব পুড়ে গেছে। শুধু পড়নের কাপড় ছাড়া আর কিচ্ছু বাকি নেই পুড়তে। আগুনে কোনও কিছুই বের করতে পারেনি। শুধু জানটা নিয়ে বেঁচে আছি।’
স্বপ্না আক্তার ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘স্বামী রিকশা চালায়। সঙ্গে আছে সাত মাস বয়সী বাচ্চা। পরনের কাপড় ছাড়া আর কোনও কিছু নেই। করোনার কারণে আয় রোজকার কম হয় তাই ঘরে দুই মন চাল কিনে রেখেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মমতা! দুই মন চাল পুড়ে ভাত হয়ে গেছে।’
এর আগে রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার মাহফুজ রিবেন ব্রেকিংনিউজকে জানান, সোমবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে ওই বস্তিতে আগুন লাগে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। আগুনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ঘটনাস্থলে আরও ইউনিট যোগ দিতে শুরু করে। রাত সোয়া ১২টা নাগাদ মোট ১২টি ইউনিট পুরোদমে আগুন নেভানোর কাজ করছিল। আগুন লাগার একঘণ্টারও বেশি সময় পর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
গুলশান নিকেতনের পশ্চিম পাশের এলাকাটি বস্তি হলেও সেখানে একটি বাজার আছে, আছে কয়েকটি পাকা বাড়িও।
প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এখনও জানা যায়নি। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বস্তির কয়েকশ ঘরের মধ্যে কমপক্ষে দেড় থেকে দুইশ ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে।