চীনের উহান, যে শহরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। সেখানে করোনা নিয়ে খবর প্রকাশ করে কারাদণ্ডের মুখে পড়তে যাচ্ছেন চীনেরই এক নাগরিক সাংবাদিক। গত মে মাসে গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে আটক আছেন ৩৭ বছর বয়সী ঝ্যাং ঝান। তার পাঁচ বছরের মতো সাজা হতে পারে।
ঝ্যাং ঝান নিজের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আমরণ অনশনে যান। ১৮ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবী মুঠোফোনে একটি কল পান। তাকে জানানো হয়, ঝ্যাং ঝানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। গত শুক্রবার তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঝ্যাং ঝান একজন সাবেক আইনজীবী। নতুন প্রকাশ হওয়া নথিতে দেখা গেছে, ‘ঝগড়া বাধানো ও সমস্যাকে উসকানি’ দেওয়ায় তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চীনে অ্যাকটিভিস্টদের প্রায়ই এই অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সূচনা চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে। ওই সময় সেখানে করোনা নিয়ে প্রতিবেদন করায় সাংবাদিক আটকের ঘটনা এটা প্রথম নয়।
উহান শহরে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে খবর প্রকাশ করে গত ফেব্রুয়ারিতে নিখোঁজ হন তিনজন। তাদের মধ্যে লি জেহুয়া নামের এক ব্যক্তি এপ্রিল মাসে ফিরে এসে দাবি করেন, তিনি এত দিন কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। চেন কুইশির নামের আরেকজনের খোঁজ পরে পাওয়া গেলেও তাকে সরকারি নজরদারিতে রাখা হয়। তবে তৃতীয় সাংবাদিক ফাং বিন এখনো নিখোঁজ।
নতুন প্রকাশ হওয়া একটি অভিযোগপত্রে দেখা গেছে, ঝ্যাং ঝান ফেব্রুয়ারিতে উহানে যান। সেখান থেকে তিনি কতগুলো প্রতিবেদন করেন।
কিন্তু গত ১৪ মে ঝ্যাং ঝান উহান থেকে হারিয়ে যান বলে জানিয়েছে চীনা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা নেটওয়ার্ক অব চাইনিজ হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডারস (সিএইচআরডি)। এক দিন পর জানা যায়, ৪০০ মাইলের বেশি দূরের শহর সাংহাই থেকে তাকে আটক করেছে পুলিশ। ১৯ জুন তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংহাইতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর প্রায় তিন মাস পর ৯ সেপ্টেম্বর তার আইনজীবীকে তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
সিএইচআরডি জানিয়েছে, আটক ঝ্যাং ঝান নিরপেক্ষ সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারের যারা স্বচ্ছতার দাবি তুলেছিলেন, তাদের হয়রানি নিয়েও খবর প্রকাশ করেছিলেন।
গতকাল সোমবার প্রকাশিত হওয়া ওই অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঝ্যাং ঝান লেখনী, ভিডিও ও অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার করে উইচ্যাট, টুইটার ও ইউটিউবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে উহানের ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বাজেভাবে তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব অভিযোগের জন্য তাকে চার থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
তবে চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝ্যাং ঝানের সমস্যা এবারই প্রথম নয়। সিএইচআরডি জানিয়েছে, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাকে সাংহাইতে তলব করে পুলিশ। ওই সময়ে হংকংয়ের অ্যাকটিভিস্টদের পক্ষে কথা বলায় তাকে আটকও করা হয়। ওই অবস্থায় জোর করে তার মানসিক পরীক্ষা করানো হয় বলে জানা যায়।