27 October 2020

প্যারিসের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি ঢাকায় একটি ইসলামি রাজনৈতিক দলের বিক্ষোভে

 


বাংলাদেশে ইসলামপন্থী একটি দল ঢাকায় এক বিক্ষোভ থেকে ফ্রান্সের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়েছে।

ঢাকায় ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নামের দলটির শত শত নেতাকর্মী আজ সকালে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

বিক্ষোভে ফ্রান্সের পতাকা এবং দেশটির প্রেসিডেন্টে এমানুয়েল ম্যাক্রঁর কুশপুত্তলিকা আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে।

সেই বিক্ষোভ থেকে ফ্রান্সের পণ্য বর্জনের আহ্বানও জানানো হয়েছে।

ফ্রান্সে ইসলাম এবং নবীর কার্টুন নিয়ে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁর সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন আজ ঢাকায় দূতাবাস ঘেরাওয়ের এই কর্মসূচি নিয়েছিল।

সকালে দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরগেটে জড়ো হয়ে সমাবেশ করেন।

সমাবেশের পর ফ্রান্সের দূতাবাস ঘেরাও করার শ্লোগান তুলে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।

মিছিলকারিরা ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে অবস্থান নিয়ে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তাদের ঘেরাও কর্মসূচি শেষ করেন।

ইসলামী আন্দোলনের আমীর সৈয়দ রেজাউল করীম সহ দলটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

মি: করীম ফ্রান্সের সাথে কূটনেতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফ্রান্স সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর দাবি সহ মোট পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেছেন।

ইসলামী আন্দোলন মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসিকেও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়ার দাবি করেছে।

দলটি আগামী ২৯শে অক্টোবর জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী দলগুলো এবং বিভিন্ন সংগঠন কয়েকদিন ধরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের প্রতিবাদ করছে।

25 October 2020

ফ্রান্সে 'মহানবীর' ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের অভিযোগে ঢাকায় মানববন্ধন ক‌রে‌ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ

 

ফ্রান্স সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মহানবী (স.) এর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের অভিযোগে ঢাকায় মানববন্ধন ক‌রে‌ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বাংলাদেশ। র‌বিবার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

এ সময় বক্তারা বলেন, যে মাসে প্রিয় হাবিবের আগমনে সারাবিশ্ব আনন্দে মাতোয়ারা, ঠিক এ সময়ে ফ্রান্স সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানের কলিজায় আঘাত দেয়। মুসলিমদের ঈমানের মূল হাবিবের প্রতি অবমাননা সহ্য করা যায় না। রাসূলের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ সৃষ্টির পায়তারা ছাড়া আর কিছু নয়। শান্তিময় পরিবেশকে অশান্ত করার হীন প্রয়াস মাত্র। ফ্রান্সে এটা নতুন নয়, আগেও তারা কাজ করেছে। জাতিসংঘের নিরবতার কারণে বিশ্ব মানবতার অবতারের প্রতি অবমাননা করে যাচ্ছে। অবিলম্বে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘ, ও আই সি' র প্রতি আহ্বান জানাতে বাংলাদেশ সরকার যেন সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনে তার দাবি জানানো হয়।

সংগঠ‌নের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হাফেজ মাও. হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মুজাফফর আহমদ মুজাদ্দেদী, ড. মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, মুফতি মাহমুদুল হাসান কাদেরী, হাফেজ মুনিরুজ্জামান আলকাদেরী, গোলাম মাহমুদ ভূঁইয়া মানিক, ডা. এস এম সরওয়ার ও মুফতি নাজমুস সাদাত ফয়েজী প্রমুখ।

সালাম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য দেওয়ার কারনেঃ অধ্যাপক জিয়ার বিরুদ্ধে দুই মামলা

 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমান সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন। তিনি এক টেলিভিশনের টক শোতে 'আসসালামু আলাইকুম' ও 'আল্লাহ হাফেজ' বলাকে জঙ্গিবাদের চর্চা হিসেবে তুলে ধরেন।  এমনই মন্তব্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। 

রবিবার (২৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে মামলাটি  দায়ের করা হয়েছে।

মাসিক আল বাইয়্যিনাত ও দৈনিক আল ইহসান সম্পাদক মুহম্মদ মাহবুব আলম একটি এবং ইমরুল হাসান নামে এক আইনজীবী অপর একটি মামলা দায়েরের আবেদন করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দি শেষে ট্রাইব্যুনাল আদেশের জন্য রেখে দেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, 'আসসালামু আলাইকুম' বলা ও 'আল্লাহ হাফেজ' বলাকে গর্হিত, নিন্দনীয়, জঘন্য ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক জিয়া রহমান। এসবকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন তিনি।

সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের 'উপসংহার' নামক টক শোতে 'ধর্মের অপব্যাখ্যায় জঙ্গিবাদ' বিষয়ক আলোচনায় মুসলিমদের শুদ্ধ উচ্চারণে 'আসসালামু আলাইকুম' বলা ও 'আল্লাহ হাফেজ' বলাকে গর্হিত, নিন্দনীয়, জঘন্য ব্যাখ্যা করেন অধ্যাপক জিয়া রহমান।

বিশেষ শক্তিতে’ আ.লীগ ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে: ফখরুল ইসলাম আলমগীর

 

আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে’ দেশে ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। শুধুমাত্র জনগণকে বোকা বানানোর জন্য তারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, প্রকৃতপক্ষে একব্যক্তির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চলছে।  আমরা অনেক বলেছি, মানববন্ধন, মিছিল ও হরতালসহ বহু কিছু করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত এই সরকারের টনক নড়াতে পারিনি।  কারণ তারা বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আছে।’

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা পরিস্কারভাবে জানাতে চাই- অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, অবিলম্বে জনগণের চোখের ভাষা বুঝে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হবে। সেই ঢেউয়ে আপনারা ভেসে যাবেন।’

জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আর নিশ্চুপ হয়ে থাকবেন না।  যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আজকে যদি আমরা প্রতিবাদ না করি, রুখে না দাঁড়াই, তাহলে ১৯৭১ সালের আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা যে ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই-সংগ্রাম করেছিলাম, যে গণতন্ত্রকে আমরা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি, সেই গণতন্ত্রকে তারা আবার হরণ করেছে।  সুতরাং আমাদের সবাইকে আজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।  আমাদের অধিকার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এ সময় ‘দানবীয়-হাইব্রিড-স্বৈরাচারী-পুতুল সরকারের’ বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ ‘ভিন্নমতকে স্তব্ধ করতে চায়’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তারা (সরকার) আজকে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ, যারা ভিন্নমত পোষণে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করছে।  তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া ও গ্রেফতার করছে।  যার প্রমাণ সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী।  মিথ্যা অপবাদ ও আইনের অপব্যখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে আটকিয়ে রেখেছে। এমনিক জামিনও দিচ্ছে না তাকে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিককে আজকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে।  এছাড়া হত্যার শিকারও হচ্ছে সাংবাদিকরা।  কিন্তু তার কোনও বিচার হচ্ছে না।  এছাড়া সাংবাদিকরা যেন সত্য কথা না লিখতে পারেন সেজন্য আইন করা হয়েছে।  যার কারণে সাংবাদিকরা আজকে লিখতে ভয় পান। সারাদেশে একটা ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে।  বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা আজকে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজী, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের মুক্তি এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান ফখরুল।

আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন নিয়ে খেলা করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন ও সরকার যৌথভাবে এই নির্বাচনকে তাদের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় থাকার জন্যে।  তারা নির্বাচন নিয়ে খেলছে। নির্বাচনের নামে তারা আজকে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১৮ উত্তরাতে যে উপনর্বিাচন হচ্ছে, সেই নির্বাচনে আমাদের দলের একজন নেতা মোস্তফা।  যিনি কমিশনার প্রার্থী হয়েছিলেন, গত রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে আক্রমণ করে ভাঙচুর করেছে।  গতকাল সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী রেজা সাহেবকে (সেলিম রেজা) সারাদিন ঘরের মধ্যে আটক করে রাখা হয়েছিলো।’

সংগঠনের নেতা সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ছড়াকার আবু সালেহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুল করীম, শামীমুর রহমান শামীম, প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, প্রকৌশলী ফখরুল আলম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রফিকুল ইসলাম, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, জাসাসের রফিকুল ইসলাম প্রমূখ পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য দেন।

01 October 2020

করোনা কেড়ে নিল আরও ২১ প্রাণ, আক্রান্ত ১৫০৮

 


করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ২৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে ১ হাজার ৫০৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। যার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৮৭ জন।


বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো করোনা সংক্রান্ত নিয়মিত স্বাস্থ্য সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের ১০৮টি ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪০৪টি। এতে ১ হাজার ৫০৮ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনা বিবেচনায় শাক্তের হার ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। আর মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। মারা যাওয়া ২১ জনের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ ও ৫ জন নারী।

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। 

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ। মৃতের সংখ্যা দিক থেকে আছে ২৯তম অবস্থানে। 

এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩৩ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১০ লাখ।

রিফাত হত্যা: মিন্নিসহ ৬ জনের ফাঁসি

 


বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যায় জড়িত থাকায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ছয় জনকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত।

এ ছাড়াও চার জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজি, আল-কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান এবং নিহত রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।

খালাসপ্রাপ্তরা হলেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, কামরুল ইসলাম সাইমুন, মো. সাগর ও মো. মুছা।

আসামিদের দণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ভুবন চন্দ্র হালদার।

গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দু'ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ।

এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনও পলাতক।

গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি থেকে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় মোট ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

১৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার দুই পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায়ের জন্য আজকের দিন ঠিক করেন।

রায়কে ঘিরে মঙ্গলবার রাত থেকে বরগুনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে পুলিশ। জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসানো হয়েছে। এ ছাড়া র‍্যাব সদস্যদের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশও টহল দিচ্ছে বরগুনায়। 

রায় শুনে কেঁদেছেন রিফাতের বাবা : জানালেন সন্তুষ্টি কথা

রায় শুনে আদালতেই কেঁদে ফেলেন তিনি। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিচারে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা জানান দুলাল শরীফ। 

রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ দ্রুত এ মামলার তদন্ত শেষ করায় পুলিশকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান। 

তিনি বলেন, ''গত এক বছর ধরে আমাদের পরিবারে সদস্যরা কাঁদছি। আমাদের নির্ঘুম রাত কেটেছে। তবে ওই কান্না আর আজকের কান্নার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এই কয়টা মাস এ দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম।''  

'আমরা উচ্চ আদালতে যাব', রায়ের প্রতিক্রিয়ার মিন্নির বাবা

মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেছেন, ''আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।''।

এ ছাড়া এই রায় প্রত্যাশিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম। 

বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ''এ রায় দুর্ভাগ্যজনক ও অনভিপ্রেত। রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি।'' 

তিনি বলেন, গুরুতর আহত হওয়ার পরও রিফাত মিন্নিকে দোষারোপ করেনি। এ ছাড়ও মিন্নি নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে রিফাতকে বাচাঁনোর চেষ্টা করেছেন। নিয়ে গেছেন হাসপাতালেও।

তিনি আরো বলেন,''আমরা এ রায়ে অসন্তুষ্ট। তাই উচ্চ আদালতে যাবো। যা বলার তা উচ্চ আদালতে বলবো।'' উচ্চ আদালতে মিন্নি খালাস পাবে বলেও আশা ব্যক্ত করেন তিনি। 

রিফাত হত্যার মাস্টারমাইন্ড মিন্নি: রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত

রিফাত শরিফ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে মিন্নিকে উল্লেখ করেছেন আদালত। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু।

তিনি বলেন, আমরা শুরু থেকেই বলেছিলাম- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির ষড়যন্ত্রের কারণে রিফাত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। রায়ের অবজারভেশনে সেটাই এসেছে। এই মিন্নি রিফাত শরীফ হত্যা করার জন্য পরামর্শ করেছে। রায়ের অবজারভেশনে এটা আছে। এ কারণেই মিন্নিকে আজ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। 

রায়ের পর হাসতে হাসতে প্রিজনভ্যানে উঠলো রিফাত: ইশারায় চাইলো টাকা

রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রায় ঘোষণার পর ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজীকে হাসতে দেখা গেছে। 

রায় ঘোষণার পর আসামিদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়ার সময় রিফাত হাসতে হাসতে প্রিজন ভ্যানে ওঠেন। এ সময় ভ্যানে উঠেই তিনি হাতের আশারায় কারো কাছে টাকাও চান।

বুধবার বিকেল ২টা ৫৫ মিনিটের সময় এ দৃশ্যের অবতারণা হয় বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রধান ফটকে। রায় ঘোষণার পর ফাঁসির দণ্ডে দন্ডিত এ মামলার ছয় আসামির মধ্যে মিন্নি ও আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন ব্যতিত অন্য সকল আসামিকে স্বাভাবিক দেখা যায়।

এ সময় প্রিজন ভ্যানের ভেতর থেকে উচ্চস্বরে রিফাত ফরাজি বলেন, ''আমরা যা করেছি তা আল্লাহই করিয়েছে। আর ভবিষ্যতেও যা হবে, তাও আল্লাহই করাবেন।''

পরে আদালত থেকে প্রিজনভ্যানের ভেতরেই উল্লাশ করতে করবে কারাগারে যান তারা।