25 October 2020

বিশেষ শক্তিতে’ আ.লীগ ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে: ফখরুল ইসলাম আলমগীর

 

আওয়ামী লীগ সরকার ‘বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে’ দেশে ‘একদলীয় শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। শুধুমাত্র জনগণকে বোকা বানানোর জন্য তারা গণতন্ত্রের মুখোশ পরে একদলীয় শাসনব্যবস্থা, প্রকৃতপক্ষে একব্যক্তির শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চলছে।  আমরা অনেক বলেছি, মানববন্ধন, মিছিল ও হরতালসহ বহু কিছু করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত এই সরকারের টনক নড়াতে পারিনি।  কারণ তারা বিশেষ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আছে।’

সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এভাবে আর চলতে পারে না। আমরা পরিস্কারভাবে জানাতে চাই- অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, অবিলম্বে জনগণের চোখের ভাষা বুঝে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জনগণের উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হবে। সেই ঢেউয়ে আপনারা ভেসে যাবেন।’

জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আর নিশ্চুপ হয়ে থাকবেন না।  যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে আজকে যদি আমরা প্রতিবাদ না করি, রুখে না দাঁড়াই, তাহলে ১৯৭১ সালের আমরা যে স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, আমরা যে ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রের জন্যে লড়াই-সংগ্রাম করেছিলাম, যে গণতন্ত্রকে আমরা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছি, সেই গণতন্ত্রকে তারা আবার হরণ করেছে।  সুতরাং আমাদের সবাইকে আজকে রুখে দাঁড়াতে হবে।  আমাদের অধিকার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এ সময় ‘দানবীয়-হাইব্রিড-স্বৈরাচারী-পুতুল সরকারের’ বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষ জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া আওয়ামী লীগ ‘ভিন্নমতকে স্তব্ধ করতে চায়’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভিন্নমতকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তারা (সরকার) আজকে সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সাধারণ মানুষ, যারা ভিন্নমত পোষণে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করছে।  তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া ও গ্রেফতার করছে।  যার প্রমাণ সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী।  মিথ্যা অপবাদ ও আইনের অপব্যখ্যা দিয়ে তাকে গ্রেফতার করে আটকিয়ে রেখেছে। এমনিক জামিনও দিচ্ছে না তাকে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, সাংবাদিককে আজকে নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হচ্ছে।  এছাড়া হত্যার শিকারও হচ্ছে সাংবাদিকরা।  কিন্তু তার কোনও বিচার হচ্ছে না।  এছাড়া সাংবাদিকরা যেন সত্য কথা না লিখতে পারেন সেজন্য আইন করা হয়েছে।  যার কারণে সাংবাদিকরা আজকে লিখতে ভয় পান। সারাদেশে একটা ভয় ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করা হয়েছে।  বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে তারা আজকে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

অবিলম্বে রুহুল আমিন গাজী, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের মুক্তি এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানান ফখরুল।

আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন নিয়ে খেলা করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন ও সরকার যৌথভাবে এই নির্বাচনকে তাদের একটা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় থাকার জন্যে।  তারা নির্বাচন নিয়ে খেলছে। নির্বাচনের নামে তারা আজকে ত্রাস সৃষ্টি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা-১৮ উত্তরাতে যে উপনর্বিাচন হচ্ছে, সেই নির্বাচনে আমাদের দলের একজন নেতা মোস্তফা।  যিনি কমিশনার প্রার্থী হয়েছিলেন, গত রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীরা তার বাড়িতে আক্রমণ করে ভাঙচুর করেছে।  গতকাল সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে আমাদের প্রার্থী রেজা সাহেবকে (সেলিম রেজা) সারাদিন ঘরের মধ্যে আটক করে রাখা হয়েছিলো।’

সংগঠনের নেতা সাংবাদিক শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে ছড়াকার আবু সালেহ, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, শহীদুল ইসলাম, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক আবদুল করীম, শামীমুর রহমান শামীম, প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, প্রকৌশলী ফখরুল আলম, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের রফিকুল ইসলাম, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা বেগম, জাসাসের রফিকুল ইসলাম প্রমূখ পেশাজীবী নেতারা বক্তব্য দেন।