01 March 2021

প্রেসক্লাবে ছাত্রদল--পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৪৭ নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা

 রাজধানীর প্রেসক্লাবে ছাত্রদলের সমাবেশে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির ৪৭ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রবিবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এ মামলাটি দায়ের করে। 

মামলায় এজাহারনামীয় ৪৭ জন নেতাকর্মী ও অজ্ঞাতনামা ২০০/২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে (পুলিশ অ্যাসল্ট) হত্যাচেষ্টা ও হামলা ও ভাঙচুর চালানো। 

সোমবার (১ মার্চ) সকালে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন অর রশীদ ব্রেকিংনিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 


তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিদের আদালতে উপস্থাপন করা হবে। গতকাল সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছে। সংঘর্ষের সময় প্রেসক্লাব সংলগ্ন অস্থায়ী পুলিশ বক্সের জানালা ভাংচুরসহ পুলিশের ওপর হামলা চালায় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।’ 

এ সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান তিনি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ছাত্রদল। সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে জমায়েত শুরুর আগেই পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ে নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এক পর্যায়ে নেতাকর্মীরাও পুলিশের ওপর পাল্টা হামলা চালায়। দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে পুলিশ ও নেতাকর্মীসহ শতাধিক লোক আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রদলের বেশ কয়েকজনকে আটক করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ছাত্রদলের আরও ৭ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। 

পুলিশ বলছে, ছাত্রদলকে সমাবেশের কোনও অনুমতি দেয়া হয়নি। এ সমাবেশ পূবঘোষিত ছিল না। পূর্বপরিকল্পিতভাবে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়েছে। 


বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রেসক্লাবে এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশের জন্য কোনও ধরনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হয় না। 



24 February 2021

আল জাজিরায় প্রতিবেদনের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন ফেরত দিয়েছে আদালত।

 


কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় প্রচারিত 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' শিরোনামে প্রতিবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট চার জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন শুনানি শেষে তা ফেরত দিয়েছে আদালত। ফলে এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আর কোন মামলা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক জানান, আদালত বলেছে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমোদন থাকার দরকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন না থাকার কারণে আবেদনটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, আদালত বলেছেন যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কোন মামলা করতে হলে সরাসরি সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হয়।

তিনি বলেন, তবে কোন ব্যক্তি যদি মামলা করতে চায় তাহলে তাকে সরকারের কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে যে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করতে পারবেন কিনা। "যদি সরকার অনুমতি দেয় তাহলেই কেবল কোন ব্যক্তি মামলা করতে পারবেন। এছাড়া নয়।"

সেকারণেই মামলার আবেদনটি আদালত আমলে না নিয়ে বাদী বরাবর ফেরত দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, বাদী সরকারি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই মামলার আবেদন করেছেন। তবে বাদী যদি অনুমোদন নিয়ে আবার নতুনভাবে মামলাটি দায়ের করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী মশিউর মালেক জানান, তিনি মামলাটি করার বিষয়ে অনুমোদন নিতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করবেন। সরকার অনুমোদন দিলে তিনি সেটি নিয়ে মামলাটি আবার দায়েরের আবেদন করবেন। আর যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি আর আবেদন করবেন না। এরআগে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মশিউর মালেক।

আবেদনে তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন আল জাজিরায় প্রচার করে রাষ্ট্র এবং সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

আবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তারা হলেন, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরি প্রবাসী বাংলাদেশি জুলকারনাইন সামি এবং আল জাজিরার ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান সম্পাদক মোস্তেফা স্যোয়াগ।

মামলার আবেদনকারী বলেছেন যে, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সামি এবং ডেভিড বার্গম্যানের তৈরি করা ষড়যন্ত্রমূলক একটি প্রতিবেদন যেটার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত এবং উস্কে দিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদন আল জাজিরা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে। যার কারণে আলজাজিরার প্রধান সম্পাদকও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।

মি. মালেক বলেন, সে হিসেবে এই চারজনসহ এদের নেপথ্যে মদদদাতা, অর্থযোগানদাতাসহ তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করে কারা কারা জড়িত তা বের করে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য।

গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা অনুমতির প্রয়োজন হয়।

গত ১লা ফেব্রুয়ারি 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' নামের এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রচারের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

20 February 2021

'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' নামে আল জাজিরার প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে কি গুগল ও ফেসবুক বাধ্য?


 কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তৈরি অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন নামে একটি তথ্যচিত্র সরিয়ে ফেলতে গুগল ও ফেসবুককে বিটিআরসি যে আবেদন জানিয়েছে তা মানতে প্রতিষ্ঠান দুটি আইনগত ভাবে বাধ্য নয়।

একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে যে, আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, "ওইভাবে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তাদের একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আছে।"

তিনি বলেন, যেকোন দেশের বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন- তাদের কন্ডাক্টের আওতায় আছে।"সেই অর্থে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা তো থাকেই," বলেন তিনি।

এর আগে বুধবার বিকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশন যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, হাইকোর্ট সেই প্রতিবেদন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়।

যার জের ধরেই ইন্টারনেট থেকে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রের ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার জন্য গুগল এবং ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানায় বিটিআরসি।

কাতার ভিত্তিক টেলিভিশনটির এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।ইস্যুটি দেশের আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

মি. মৈত্র বলেন, যেহেতু তাদের সাথে বাংলাদেশের কোন আইনি চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই, এজন্য তাদের অনুরোধ করা হবে তারা যাতে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

তবে বিটিআরসির অনুরোধে যদি এই দুটি সংস্থা কোন সাড়া না দেয় সেক্ষেত্রে কী করা হতে পারে প্রশ্ন করা হলে মি. মৈত্র বলেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার এবং আদালতের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে।

তিনি বলেন, যদি তারা সরিয়ে ফেলতে রাজি না হয় তাহলে সে সিদ্ধান্তটি সরকার এবং আদালতকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদের কাছ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

মি. মৈত্র বলেন, "যেহেতু আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা নেই এগুলো বন্ধ করার, সেহেতু বাধ্য হয়ে আমরা তাদের অনুরোধ জানাবো।"

এ বিষয়ে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব যিনি বিটিআরসির পক্ষ থেকে আইনি বিষয়গুলোর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় বিটিআরসিকে বলেছে যে, তার আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্ম গুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবেদনটি নামিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এই দুটি সংস্থার এথিক্যাল কমিটি দেখবে যে, এই প্রতিবেদনটি কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনের কতটুকু লংঘন হয়েছে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এবং আল-জাজিরার অতীত ইতিহাসের বিষয়গুলো বিবেচনা করে নামিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

মি. খন্দকার বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, এ পর্যন্ত টুইটার, ইউটিউব বা ফেসবুক যখন কোন বিষয় সম্পর্কে আদালতের কোন নির্দেশনার কথা জেনেছে তখন সেটা আবেদনের প্রেক্ষিতে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আইনে কী আছে?

কর্পোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিটিআরসি-কে, কোন প্রতিষ্ঠানকে নয়। তাই এটা মানা না মানার প্রশ্নটি আসে না। তবে আদালত তার নির্দেশনায় এরই মধ্যে বলেছে যে, এই কন্টেন্ট বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অপরাধ।

তিনি বলেন, তবে কোন প্ল্যাটফর্ম যতক্ষণ পর্যন্ত এটা না জেনে ওই কন্টেন্ট প্রচার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন দায় থাকবে না।

বিটিআরসি টেক ডাউন রিকোয়েস্ট বা সরিয়ে নেয়ার আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা গুগল এবং ফেসবুককে জানানোর পরও যদি সেটি থাকে তাহলে সেটি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে জানান তিনি।

মি. ফারুক বলেন, বাংলাদেশে যদি ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকে তাহলে তাদেরকে এই অপরাধের আওতায় আনা যাবে।

"যদিও সরাসরি কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ইনডিরেক্ট একটা চাপ ওদের উপর আছে।"

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত কোন অপরাধ যদি বিদেশের কেউও করে থাকে তাহলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ দেয়া রয়েছে। অর্থাৎ অপরাধী দেশের সীমার বাইরে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে।

সেক্ষেত্রে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পর এর সমন বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে জানান তিনি। আর সমন পৌঁছানোর পরই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান এই আইনজীবী।

09 February 2021

আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

 

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। আজ সোমবার এটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করা রিটটিতে একই সঙ্গে গণমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের। তবে কে রিট আবেদন করেছে সে কথা জানানো হয়

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন সম্প্রচার করে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। সেখানে প্রচারিত তথ্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সেনা সদর দপ্তর।

অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোও এ নিয়ে সোচ্চার।



30 January 2021

করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন: পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কি না এবং টিকা নিয়ে আপনার যত প্রশ্ন ও উত্তর

 

কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ন্ত্রণে আনার অংশ হিসেবে বিশ্বজুড়েই গণ টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছেবাংলাদেশেও বুধবার বিকেল থেকে শুরু হয়েছে করোনা টিকাদান কর্মসূচি।

ভ্যাকসিন বা টিকা কী?

টিকা মানুষের দেহকে নির্দিষ্ট কোন একটি সংক্রমণ, ভাইরাস কিংবা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত করে। টিকায় মূলত যে বস্তুটির কারণে ওই রোগটি হয় তার একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ থাকে যাকে  "বুলু-প্রিন্ট" বলা হয়।

এই অংশটি দেহে একই রকমের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে পরবর্তীতে ওই ভাইরাসের আক্রমণ শনাক্ত করতে সাহায্য করে এবং সেটির বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।

টিকার কারণে খুব বেশি অসুস্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কম তবে অনেকের মধ্যে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন, হাতে ব্যথা বা হালকা জ্বর।

তবে এর পরের ধাপ হচ্ছে, আপনি ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা অর্জন করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি' মতে ভ্যাকসিন বা টিকার সবচেয়ে শক্তিশালী বিষয়টি হচ্ছে, অন্য ওষুধগুলো যখন কোন একটি রোগের প্রতিকার করে বা সারিয়ে তোলে, টিকা সেখানে ওই রোগটিকেই প্রতিরোধ করে।

টিকা কি নিরাপদ?

টিকার একটি আদি রূপ আবিষ্কৃত হয়েছিল ১০ম শতকে চীনে। তবে ১৭৯৬ সালের আগে এটি স্বীকৃতি পায়নি। সেবছর এডওয়ার্ড জেনার দেখেন যে, কাউপক্স বা গোবসন্ত রোগের মৃদু সংক্রমণ গুটি বসন্ত রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তিনি তার এই তত্ত্ব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুই বছর পর গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করেন এবং তখন থেকে ল্যাটিন শব্দ "ভ্যাকা" থেকে ভ্যাকসিন শব্দটির উৎপত্তি হয়। ল্যাটিন ভাষায় ভ্যাকা শব্দটির অর্থ হচ্ছে গরু।

আধুনিক বিশ্বের চিকিৎসা দুনিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন ধরা হয় ভ্যাকসিন বা টিকাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভ্যাকসিন বা টিকার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ২০-৩০ লাখ মৃত্যু প্রতিরোধ করা এবং ২০টির বেশি রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

সিডিসি বলছে যে, কোন টিকা বাজারে আনার আগে সেগুলো নানা ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানবদেহে প্রয়োগের আগে সেগুলো ল্যাবে প্রাণীর উপর পরীক্ষা করা হয় এবং সেটা নিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপকদের অনুমোদন নেয়া হয়। ঝুঁকি আছে, কিন্তু ওষুধের তুলনায় ঝুঁকির চেয়ে সুবিধাই বেশি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুটি বসন্তের কথা যাতে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে। যা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে টিকার কল্যাণে।

তবে ধরনের সাফল্য অর্জন করতে কয়েক দশকও লেগে যায়। গত বছরের অগাস্টে মাত্র আফ্রিকাকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও এই রোগের টিকাদান কর্মসূচি সারা বিশ্বে শুরু হয়েছে আরো ৩০ বছর আগে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন যে, সারা বিশ্বের মানুষকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া এবং এর মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে কয়েক মাস এমনকি বছরও লেগে যেতে পারে।

টিকা কীভাবে তৈরি হয়?

কোন একটি রোগের জীবাণু যেমন- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্যারাসাইট কিংবা ফাঙ্গাস যখন শরীরে প্রবেশ করে তখন এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য শরীরের অ্যান্টিজেন উপাদানটি অ্যান্টিবডির উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়।

সচরাচর, দৈনন্দিন জীবনাচরণের সময় কোনো দেহে জীবাণু প্রবেশ করার আগে অ্যান্টিজেনের একটি নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয় টিকা। তখন দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ওই আসল জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং প্রতিহত করে।

নতুন এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই আসলে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরি করা হয়েছে।

কোভিডের টিকা কীভাবে তুলনা করা হয়?

ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্না দুটি টিকাই মেসেঞ্জার আরএনএ ভ্যাকসিন যা ভাইরাসের জেনেটিক কোড ব্যবহার করে।

দুর্বল বা নিষ্ক্রিয় অ্যান্টিজেন ব্যবহারের পরিবর্তে এই টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি "স্পাইক প্রোটিন" তৈরি করতে হবে। এই স্পাইক প্রোটিনটি কোভিড-১৯ ভাইরাসের উপরিভাগে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যে অ্যান্টিবডি দরকার হয় সেটি তৈরি করতে সাহায্য করে এই প্রোটিন। টিকাগুলো দেহের কোষকে শেখায় যে কিভাবে একটি "স্পাইক প্রোটিন" তৈরি করতে হবে।

অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আবার আলাদা- শিম্পাঞ্জিকে আক্রান্ত করতো যে সাধারণ সর্দি লাগার ভাইরাস বিজ্ঞানীরা সেটিকে কিছুটা রূপান্তরিত করে তার সাথে কোভিড-১৯ ভাইরাসের জেনেটিক কোডের কিছু অংশ জুড়ে দিয়েছেন।

এই তিনটি টিকাই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের জন্য অনুমোদিত। মেক্সিকো, চিলি এবং কোস্টারিকায় ফাইজার টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে ব্রাজিলে অক্সফোর্ড সিনোভ্যাক ভ্যাকসিনের অনুমোদন রয়েছে।


আরো কী কী কোভিড ভ্যাকসিন রয়েছে?

বেইজিং ভিত্তিক সিনোভ্যাক এর তৈরি করা করোনাভ্যাক নামের টিকা এরইমধ্যে চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপিন্সে দেয়া শুরু হয়েছে। এই টিকাটি প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ ভাইরাসের মৃত বা নিষ্ক্রিয় অংশ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে।

তবে এই ভ্যাকসিনটির কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তুরস্ক ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত শেষ পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য আসার পর এই প্রশ্ন ওঠে। আর ব্রাজিলের গবেষকরা এরই মধ্যে বলেছে যে এই টিকাটি মাত্র ৫০.% কার্যকর।

ভারতে কোভিশিল্ড নামে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করেছে। এছাড়া ভারত বায়োটেক নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান কোভ্যাক্সিন নামে একটি টিকা উৎপাদন করছে।

রাশিয়া তাদের নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ভেক্টর ভ্যাকসিন স্পুটনিক ভি ব্যবহার করছে। যা ভাইরাসের একটি ভার্সন বা রূপ থেকেই বানানো হয়েছে। এই টিকাটি আর্জেন্টিনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। এরইমধ্যে টিকাটির লাখ ডোজ অর্ডার করেছে দেশটি।

ফাইজার, ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন এন্ড জনসনের প্রায় ২৭০ মিলিয়ন ডোজ টিকা কেনার অর্ডার দিয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়ন। তবে জনসন এন্ড জনসন কোম্পানির টিকাটি এখনো ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।

তবে গ্লোবাল কোভ্যাক্স কর্মসূচির আওতায় আরো ৬০০ মিলিয়ন ডোজ টিকা পাওয়ার কথা রয়েছে আফ্রিকান ইউনিয়নের। কোভ্যাক্স কর্মসূচিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গাভি নামে একটি ভ্যাকসিন অ্যালায়্যান্সের যৌথ তত্ত্বাবধানে নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য টিকা নিশ্চিত করতে পরিচালিত হয়।

এখন পৃথিবীবাসীর আগ্রহের মূলে রয়েছে ভ্যাকসিন

আপনার কি টিকা নেয়া উচিৎ?

বিশ্বের কোথাও এখনো টিকা নেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে কোন ধরণের স্বাস্থ্য সমস্যা না থাকলে সবাইকেই এই টিকা নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সিডিসি বলছে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয় এই টিকা। সেই সাথে অন্যকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়তা করে। এই টিকাকে মহামারি থেকে উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে যে, সংক্রমণ ছড়ানোকে বাধাগ্রস্ত করতে হলে ৬৫% থেকে ৭০% মানুষের টিকা নিতে হবে। তার মানে হচ্ছে মানুষকে টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। অনেক মানুষ অবশ্য যে দ্রুততার সাথে কোভিড এর টিকা উদ্ভাবন করা হয়েছে সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

যদিও এটা সত্য যে, বিজ্ঞানীরা একটা টিকার নকশা ট্রায়াল করতে কয়েক বছর পার করে দেন, তবে একটি সমাধান খুঁজে পাওয়ার পক্ষে বৈশ্বিক স্বার্থ কাজ করার কারণে করোনা টিকার উৎপাদন দ্রুততর হয়েছে। আর এই কাজটি করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিজ্ঞানী, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর কাজের সমন্বয় করেছে।

সংক্ষেপে, টিকাদান কর্মসূচি কোটি কোটি মানুষের মধ্যে কোভিডের সংক্রমণ ঠেকিয়ে দেবে এবং হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের পথ তৈরি করবে। এটা আমরা যত দ্রুত অর্জন করতে পারবো তত দ্রুত আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবো।

টিকা দেবার পরও হাজার হাজার লোক করোনাভাইরাস পজিটিভ হয়েছেন

করোনাভাইরাসের কতগুলো টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে?

বৈশ্বিকভাবে ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে নেমেছে ২শ টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, তাদের তালিকায় প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে রয়েছে ১৫৪টি ভ্যাকসিন।

এছাড়া ফেস-ওয়ানে ছোট আকারে নিরাপত্তা নিয়ে ট্রায়ালে রয়েছে ২১টি ভ্যাকসিন। ফেস টু-তে নিরাপত্তা ট্রায়ালে রয়েছে ১২টি এবং ফেস-থ্রি-তে বিস্তারিত পরীক্ষা এবং কার্যকারিতার ট্রায়ালে রয়েছে আরো ১১টি ভ্যাকসিন।

আরো যেসব টিকার ট্রায়াল এখনো চলছে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি। বলা হচ্ছে এটি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের মতোই কাজ করবে এবং এটি ৯২% সুরক্ষা দেবে বলে এখনো পর্যন্ত জানানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যে হাজার মানুষের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে জ্যানসেন' নামের একটি টিকা। পুরো বিশ্বে এই টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছে ৩০ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী।

চীনের সিনোফার্ম উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস চূড়ান্ত ট্রায়ালে রয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার গামেলিয়া রিসার্চ ইন্সটিটিউটেরও একটি ভ্যাকসিন ট্রায়ালে রয়েছে।

কোন কোন দেশে টিকা দেয়া হচ্ছে?

করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলে এখনও পর্যন্ত ১০ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। সারা বিশ্বে টিকা দেওয়ার এটাই সর্বোচ্চ হার।

ইসরায়েলের একটি হাসপাতালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষা

ইসরায়েলে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ১১.৫৫ জনকে এই টিকা দেওয়া হয়েছে। তার পরেই রয়েছে বাহরাইন। সেদেশে এই হার .৪৯। তৃতীয় স্থানে ব্রিটেন, হার .৪৭।

ফ্রান্সে ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১৩৮ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের টার্গেট ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দুই কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া, কিন্তু ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা প্রায় ২৮ লাখ মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে।



বাংলাদেশে কোন টিকা দেয়া হচ্ছে?

ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দেয়া হবে।

ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে এই টিকাটি আনা হচ্ছে। সিরাম ইন্সটিটিউট এই টিকাটি উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগী প্রতিষ্ঠান। ভারতে তারাই এই টিকাটি উৎপাদন করছে।

সিরাম ইন্সটিটিউট- যারা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন প্রস্ততকারক, তারা প্রতিমাসে পাঁচ কোটি টিকা তৈরি করছে।

ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড এর মধ্যেই বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমার সেশেলসে পাঠানো হচ্ছে।

এসব চালানের কোনটি যাচ্ছে উপহার হিসেবে, আর কোনটি সিরাম ইন্সটিটিউটের সাথে করা বাণিজ্যিক চুক্তির অধীনে।

ছাড়াও ভারত কোভিশিল্ড পাঠাচ্ছে শ্রীলংকা, আফগানিস্তান মরিশাসে। ব্রাজিলে টিকা পাঠানো হবে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি অনুযায়ী।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত এই কোভিশিল্ড নামের টিকা তৈরি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট

কোভিশিল্ড কতটা কার্যকর?

কোভিশিল্ড দেয়া হলে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অ্যান্টিবডি তৈরি করতে শুরু করে এবং যে কোন রকম করোনাভাইরাস দেহে ঢুকলে তাকে আক্রমণ করতে শিখে যায়।

চার থেকে ১২ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজটি দেয়া হয়, এবং এটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যায়- ফলে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার চেয়ে এটি সহজে বিতরণযোগ্য।

আন্তর্জাতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি প্রথমে আধা ডোজ এবং পরে পুরো ডোজ দেয়া হলে তার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত হয়।

তবে এই পদ্ধতিতে টিকাটি দেবার পক্ষে যথেষ্ট স্পষ্ট উপাত্ত নেই।

সিরাম ইন্সটিটিউট বলছে, কোভিশিল্ড উচ্চ মাত্রায় কার্যকর এবং ব্রাজিল যুক্তরাজ্যে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের উপাত্তে তার সমর্থন মিলেছে।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?

এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে, কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন একটা নিরাপদ ভ্যাকসিন।

তবে ভ্যাকসিন নেয়ার পরে কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

যেমন ভ্যাকসিন প্রয়োগের জায়গায় ফুলে যাওয়া, সামান্য জ্বর হওয়া, বমি বমি ভাব, মাথা শরীর ব্যথা।

ফাইজার, অক্সফোর্ড মডার্নার টিকার ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে বলা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, টিকার স্থানে ব্যথা, ফোলা বা লাল হওয়া, মাংসপেশি বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, জ্বর, শীতল অনুভূতি, মাথাব্যথা ক্লান্তি।

তবে এগুলোকে টিকা শরীরে সাথে মানিয়ে যাওয়ার পদ্ধতি বলেই ধরা হয়।

এখন পর্যন্ত বিশ্বে যেসব স্থানে টিকা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভারতে টিকা কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর ১৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চারশো জনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। টিকা দেয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে একজনের মৃত্যুর খবরও শোনা গেছে। তবে ভারতের কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে ওই মৃত্যুর সাথে টিকার কোন সম্পর্ক নেই।

বিস্তারিত খবর এখানেভারতে টিকা নেয়া সাড়ে চার মানুষের শরীরে প্রতিক্রিয়া, একজনের মৃত্যু

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, দেশটিতে বিনামূল্যের টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর টিকা গ্রহণকারী কারো মধ্যে যদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তাহলে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

বাংলাদেশে কারা প্রথম টিকা পাবেন?

টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে প্রথম পর্যায়ে ১৭টি ক্যাটাগরির নাগরিকদের নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রথমে তাদের টিকা নেয়ার পরে অন্যরা টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।

এই ১৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে রয়েছে:

সরকারি স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মী, বেসরকারি প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মী, প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত সকল সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা বীরাঙ্গনা, সম্মুখ সারির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সামরিক আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় অপরিহার্য কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যম-কর্মী, সিটি কর্পোরেশন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, সৎকারকাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ফায়ার সার্ভিসের মতো জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, নৌ-রেল-বিমানবন্দরে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, জেলা-উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সরকারি কার্যালয়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রবাসী অদক্ষ শ্রমিক।

টিকা নেয়ার আগে কী কী জানা জরুরি?

ব্রিটেন আমেরিকায় যে টিকাগুলো অনুমোদন পেয়েছে সেখানে টিকা সম্পর্কে কিছু বিষয় জেনে নিতে বলা হচ্ছে।

যেমন কোন কোন সমস্যা থাকলে টিকা নেয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে সে বিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।

টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসককে জানাতে হবে যে আপনার কোন স্বাস্থ্য সমস্যা আছে কিনা বা আপনি কোন রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন কিনা।

যেমন, আগে কোন টিকায় তীব্র এলার্জি দেখা দেয়া, তীব্র জ্বরসহ অসুস্থতা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলা, রক্তপাত বা আঘাতের কোন সমস্যা থাকা, গুরুতর অসুস্থতা, গর্ভবতী বা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে কিনা- এবিষয়গুলো জানা থাকতে হবে।

আর যে টিকা আপনি নিতে যাচ্ছেন সেগুলোর সাধারণ কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা সে বিষয়টিও জেনে নেয়ার চেষ্টা করুন।