কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তৈরি অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন নামে একটি তথ্যচিত্র সরিয়ে ফেলতে গুগল ও ফেসবুককে বিটিআরসি যে আবেদন জানিয়েছে তা মানতে প্রতিষ্ঠান দুটি আইনগত ভাবে বাধ্য নয়।
একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে যে, আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, "ওইভাবে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তাদের একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আছে।"
তিনি বলেন, যেকোন দেশের বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন- তাদের কন্ডাক্টের আওতায় আছে।"সেই অর্থে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা তো থাকেই," বলেন তিনি।
এর আগে বুধবার বিকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশন যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, হাইকোর্ট সেই প্রতিবেদন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়।
যার জের ধরেই ইন্টারনেট থেকে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রের ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার জন্য গুগল এবং ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানায় বিটিআরসি।
কাতার ভিত্তিক টেলিভিশনটির এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।ইস্যুটি দেশের আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
মি. মৈত্র বলেন, যেহেতু তাদের সাথে বাংলাদেশের কোন আইনি চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই, এজন্য তাদের অনুরোধ করা হবে তারা যাতে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
তবে বিটিআরসির অনুরোধে যদি এই দুটি সংস্থা কোন সাড়া না দেয় সেক্ষেত্রে কী করা হতে পারে প্রশ্ন করা হলে মি. মৈত্র বলেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার এবং আদালতের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে।
তিনি বলেন, যদি তারা সরিয়ে ফেলতে রাজি না হয় তাহলে সে সিদ্ধান্তটি সরকার এবং আদালতকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদের কাছ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।
মি. মৈত্র বলেন, "যেহেতু আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা নেই এগুলো বন্ধ করার, সেহেতু বাধ্য হয়ে আমরা তাদের অনুরোধ জানাবো।"
এ বিষয়ে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব যিনি বিটিআরসির পক্ষ থেকে আইনি বিষয়গুলোর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় বিটিআরসিকে বলেছে যে, তার আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্ম গুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবেদনটি নামিয়ে নিতে হবে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এই দুটি সংস্থার এথিক্যাল কমিটি দেখবে যে, এই প্রতিবেদনটি কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনের কতটুকু লংঘন হয়েছে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এবং আল-জাজিরার অতীত ইতিহাসের বিষয়গুলো বিবেচনা করে নামিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
মি. খন্দকার বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, এ পর্যন্ত টুইটার, ইউটিউব বা ফেসবুক যখন কোন বিষয় সম্পর্কে আদালতের কোন নির্দেশনার কথা জেনেছে তখন সেটা আবেদনের প্রেক্ষিতে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
আইনে কী আছে?
কর্পোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিটিআরসি-কে, কোন প্রতিষ্ঠানকে নয়। তাই এটা মানা না মানার প্রশ্নটি আসে না। তবে আদালত তার নির্দেশনায় এরই মধ্যে বলেছে যে, এই কন্টেন্ট বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অপরাধ।
তিনি বলেন, তবে কোন প্ল্যাটফর্ম যতক্ষণ পর্যন্ত এটা না জেনে ওই কন্টেন্ট প্রচার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন দায় থাকবে না।
বিটিআরসি টেক ডাউন রিকোয়েস্ট বা সরিয়ে নেয়ার আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা গুগল এবং ফেসবুককে জানানোর পরও যদি সেটি থাকে তাহলে সেটি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে জানান তিনি।
মি. ফারুক বলেন, বাংলাদেশে যদি ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকে তাহলে তাদেরকে এই অপরাধের আওতায় আনা যাবে।
"যদিও সরাসরি কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ইনডিরেক্ট একটা চাপ ওদের উপর আছে।"
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত কোন অপরাধ যদি বিদেশের কেউও করে থাকে তাহলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ দেয়া রয়েছে। অর্থাৎ অপরাধী দেশের সীমার বাইরে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে।
সেক্ষেত্রে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পর এর সমন বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে জানান তিনি। আর সমন পৌঁছানোর পরই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান এই আইনজীবী।