24 February 2021

আল জাজিরায় প্রতিবেদনের রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন ফেরত দিয়েছে আদালত।

 


কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরায় প্রচারিত 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' শিরোনামে প্রতিবেদনের সাথে সংশ্লিষ্ট চার জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলার আবেদন শুনানি শেষে তা ফেরত দিয়েছে আদালত। ফলে এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আর কোন মামলা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি মশিউর মালেক জানান, আদালত বলেছে যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য সরকারের অনুমোদন থাকার দরকার হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন না থাকার কারণে আবেদনটি বাতিল করার কথা জানানো হয়।

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, আদালত বলেছেন যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কোন মামলা করতে হলে সরাসরি সরকার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করতে হয়।

তিনি বলেন, তবে কোন ব্যক্তি যদি মামলা করতে চায় তাহলে তাকে সরকারের কাছ থেকে আগেই অনুমতি নিতে হবে যে তিনি রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করতে পারবেন কিনা। "যদি সরকার অনুমতি দেয় তাহলেই কেবল কোন ব্যক্তি মামলা করতে পারবেন। এছাড়া নয়।"

সেকারণেই মামলার আবেদনটি আদালত আমলে না নিয়ে বাদী বরাবর ফেরত দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে যে, বাদী সরকারি কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়েই মামলার আবেদন করেছেন। তবে বাদী যদি অনুমোদন নিয়ে আবার নতুনভাবে মামলাটি দায়ের করতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে কোন বাধা থাকবে না বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মামলার আবেদনকারী মশিউর মালেক জানান, তিনি মামলাটি করার বিষয়ে অনুমোদন নিতে সরকারের সাথে যোগাযোগ করবেন। সরকার অনুমোদন দিলে তিনি সেটি নিয়ে মামলাটি আবার দায়েরের আবেদন করবেন। আর যদি অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি আর আবেদন করবেন না। এরআগে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলাটির আবেদন করেন মশিউর মালেক।

আবেদনে তিনি অভিযোগ এনেছিলেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন আল জাজিরায় প্রচার করে রাষ্ট্র এবং সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।

আবেদনে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তারা হলেন, ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান, সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল, হাঙ্গেরি প্রবাসী বাংলাদেশি জুলকারনাইন সামি এবং আল জাজিরার ডিরেক্টর জেনারেল ও প্রধান সম্পাদক মোস্তেফা স্যোয়াগ।

মামলার আবেদনকারী বলেছেন যে, তাসনিম খলিল, জুলকারনাইন সামি এবং ডেভিড বার্গম্যানের তৈরি করা ষড়যন্ত্রমূলক একটি প্রতিবেদন যেটার মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত এবং উস্কে দিয়ে বর্তমান সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদন আল জাজিরা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছে। যার কারণে আলজাজিরার প্রধান সম্পাদকও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।

মি. মালেক বলেন, সে হিসেবে এই চারজনসহ এদের নেপথ্যে মদদদাতা, অর্থযোগানদাতাসহ তাদের সবার বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করে কারা কারা জড়িত তা বের করে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এটাই ছিল তাদের মূল বক্তব্য।

গত ১৮ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এ মামলার শুনানি অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও পরে তা পিছিয়ে ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন বা অনুমতির প্রয়োজন হয়।

গত ১লা ফেব্রুয়ারি 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' নামের এই প্রতিবেদনটি প্রথম প্রচারের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক চলছে।

20 February 2021

'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' নামে আল জাজিরার প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে কি গুগল ও ফেসবুক বাধ্য?


 কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার তৈরি অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন নামে একটি তথ্যচিত্র সরিয়ে ফেলতে গুগল ও ফেসবুককে বিটিআরসি যে আবেদন জানিয়েছে তা মানতে প্রতিষ্ঠান দুটি আইনগত ভাবে বাধ্য নয়।

একথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে যে, আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, "ওইভাবে বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তাদের একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড আছে।"

তিনি বলেন, যেকোন দেশের বিচারালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন- তাদের কন্ডাক্টের আওতায় আছে।"সেই অর্থে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা তো থাকেই," বলেন তিনি।

এর আগে বুধবার বিকালে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান এবং তার ভাইদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আল জাজিরা টেলিভিশন যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, হাইকোর্ট সেই প্রতিবেদন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সব ধরনের সামাজিক মাধ্যম থেকে অবিলম্বে সরাতে বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়।

যার জের ধরেই ইন্টারনেট থেকে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রের ভিডিওটি সরিয়ে ফেলার জন্য গুগল এবং ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানায় বিটিআরসি।

কাতার ভিত্তিক টেলিভিশনটির এই প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।ইস্যুটি দেশের আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

মি. মৈত্র বলেন, যেহেতু তাদের সাথে বাংলাদেশের কোন আইনি চুক্তি বা বাধ্যবাধকতা নেই, এজন্য তাদের অনুরোধ করা হবে তারা যাতে আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।

তবে বিটিআরসির অনুরোধে যদি এই দুটি সংস্থা কোন সাড়া না দেয় সেক্ষেত্রে কী করা হতে পারে প্রশ্ন করা হলে মি. মৈত্র বলেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকার এবং আদালতের সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয় রয়েছে।

তিনি বলেন, যদি তারা সরিয়ে ফেলতে রাজি না হয় তাহলে সে সিদ্ধান্তটি সরকার এবং আদালতকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদের কাছ থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে।

মি. মৈত্র বলেন, "যেহেতু আমাদের সেই কারিগরি সক্ষমতা নেই এগুলো বন্ধ করার, সেহেতু বাধ্য হয়ে আমরা তাদের অনুরোধ জানাবো।"

এ বিষয়ে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব যিনি বিটিআরসির পক্ষ থেকে আইনি বিষয়গুলোর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি বলেন, আদালত তার নির্দেশনায় বিটিআরসিকে বলেছে যে, তার আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে এবং প্রয়োজনে প্ল্যাটফর্ম গুলোর সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিবেদনটি নামিয়ে নিতে হবে।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে এই দুটি সংস্থার এথিক্যাল কমিটি দেখবে যে, এই প্রতিবেদনটি কোন্ দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়েছে, বাংলাদেশের আইনের কতটুকু লংঘন হয়েছে, এর বিশ্বাসযোগ্যতা কতটুকু এবং আল-জাজিরার অতীত ইতিহাসের বিষয়গুলো বিবেচনা করে নামিয়ে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

মি. খন্দকার বলেন, এর আগের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, এ পর্যন্ত টুইটার, ইউটিউব বা ফেসবুক যখন কোন বিষয় সম্পর্কে আদালতের কোন নির্দেশনার কথা জেনেছে তখন সেটা আবেদনের প্রেক্ষিতে নামিয়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রেও সেটাই হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।

আইনে কী আছে?

কর্পোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইমতিয়াজ ফারুক বলেন, নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বিটিআরসি-কে, কোন প্রতিষ্ঠানকে নয়। তাই এটা মানা না মানার প্রশ্নটি আসে না। তবে আদালত তার নির্দেশনায় এরই মধ্যে বলেছে যে, এই কন্টেন্ট বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে। আর বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অপরাধ।

তিনি বলেন, তবে কোন প্ল্যাটফর্ম যতক্ষণ পর্যন্ত এটা না জেনে ওই কন্টেন্ট প্রচার করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোন দায় থাকবে না।

বিটিআরসি টেক ডাউন রিকোয়েস্ট বা সরিয়ে নেয়ার আবেদনের মাধ্যমে আদালতের নির্দেশনা গুগল এবং ফেসবুককে জানানোর পরও যদি সেটি থাকে তাহলে সেটি বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে জানান তিনি।

মি. ফারুক বলেন, বাংলাদেশে যদি ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকে তাহলে তাদেরকে এই অপরাধের আওতায় আনা যাবে।

"যদিও সরাসরি কোন বাধ্যবাধকতা নেই, তবে ইনডিরেক্ট একটা চাপ ওদের উপর আছে।"

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংগঠিত কোন অপরাধ যদি বিদেশের কেউও করে থাকে তাহলেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় অতিরাষ্ট্রিক প্রয়োগ দেয়া রয়েছে। অর্থাৎ অপরাধী দেশের সীমার বাইরে থাকলেও তাকে আইনের আওতায় আনা যাবে।

সেক্ষেত্রে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা হওয়ার পর এর সমন বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পৌঁছানো সম্ভব বলে জানান তিনি। আর সমন পৌঁছানোর পরই মামলার প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে জানান এই আইনজীবী।

09 February 2021

আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

 

কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। আজ সোমবার এটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়।

হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করা রিটটিতে একই সঙ্গে গণমাধ্যমটির প্রচারিত ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ প্রতিবেদনটি ইউটিউব, টুইটার, ফেসবুকসহ সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদের। তবে কে রিট আবেদন করেছে সে কথা জানানো হয়

এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন সম্প্রচার করে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরা। সেখানে প্রচারিত তথ্যকে মিথ্যা ও বানোয়াট আখ্যায়িত করে এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং সেনা সদর দপ্তর।

অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকেই দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোও এ নিয়ে সোচ্চার।