15 December 2020

আজ সরকারি মাধ্যমিকে ভর্তির আবেদন শুরু আজ

 


করোনার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে অনলাইনে ভর্তি আবেদন শুরু হচ্ছে।


প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত https://gsa.teletalk.com.bd এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। আগামী ২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। 

এর পর ৩০ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মাবলি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে এ বছর বিদ্যালয় থেকে ভর্তি ফরম বিতরণ করা হবে না। ঢাকা মহানগরীর পাশাপাশি বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অবস্থিত সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি শুধু টেলিটক প্রিপেইড মোবাইল থেকে পরিশোধ করা যাবে। এবার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা।

শিক্ষার্থীদের কোনো কোটা থাকলে তা আবেদনে যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হবে। অনলাইনে পূরণকৃত আবেদনপত্রের একটি প্রিন্ট বা ডাউনলোড কপি ভর্তি সংক্রান্ত যে কোনো প্রয়োজনে সংরক্ষণে রাখতে মাউশি অধিদপ্তর থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য ঢাকা মহানগরীর ৪৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে প্রথম শ্রেণি রয়েছে ১৭টি বিদ্যালয়ে। 

রাজধানীর সবগুলো সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে তিনটি গুচ্ছে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গুচ্ছে পৃথক আবেদন করতে হবে। তবে একটি গুচ্ছ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় পছন্দ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। প্রত্যেক বিদ্যালয়ের জন্য ৫০ শতাংশ ‘এলাকা কোটা’ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া সারা দেশে আবেদনকারীরা আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠান নির্বাচনকালে থানাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা দেখতে পাবে। তখন প্রার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয় নির্বাচন করতে পারবে।

14 December 2020

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজায় লাখো মানুষের ঢল

 




লাখো মানুষের উপস্থিতিতে হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা হয়। প্রথমে তার জানাজা জাতীয় ঈদগাহে করার ঘোষণা দেওয়া হলেও অনুমতি না পাওয়ায় বায়তুল মোকাররমে করার সিদ্ধান্ত হয়। জানাজার পর আশুলিয়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন ধউর গ্রামে অবস্থিত সুবহানিয়া মাদ্রাসায় তাকে দাফন করা হবে।


রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালেচিকিৎসাধীন অবস্থায় নূর হোসাইন কাসেমী রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে মারা যান। তার প্রেস সচিব মুফতি মুনির আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নানা রোগে আক্রান্ত আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী কয়েকদিন ধরে ইউনাটেড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আল্লামা কাসেমীকে গত ১ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্ট হওয়ায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।

কাসেমীর সর্দি-ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশনসহ বার্ধক্যজনিত একাধিক রোগ রয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে কাসেমীর শারীরিক অবস্থা অস্থিতিশীল ও অবনতির দিকে যাচ্ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালের হাই ডিপেন্ডসি ইউনিটে (এইচডিইউ) নেওয়া হয়েছিলো। সন্ধ্যায় অবস্থা খারাপের দিকে গেলে সিসিইউতে নেওয়া হয়। পরে স্বাস্থ্যের আরও অবনতি ঘটায় আইসিইউতে নেওয়া হয়।

কাসেমীর ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এসেছে বলেও জানান মুনির আহমেদ। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তারেক আলম এর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। 

নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংগঠনের আমির আল্লামা আহমদ শফির মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়। 

এছাড়াও তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মুহতামিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, বেফাকের সহসভাপতি ও আল-হাইয়া বোর্ডের কো-চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বুদ্ধিজীবী দিবসে শপথ নিচ্ছি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করবোই ইনশাআল্লাহ: ফখরুল

 


বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। আজকের এই বুদ্ধিজীবী দিবসে শপথ নিচ্ছি, সত্যিকারের গণতন্ত্রকে আমরা পুনরুদ্ধার করবোই ইনশাআল্লাহ।’

সোমবার (ডিসেম্বর ১৪) মীরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭১ সালে দেশকে অকার্যকর করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়। সেসময় প্রতিভাবান মেধাবীদের হত্যা করা হয়েছে। তারা চেয়েছিল এ দেশকে অকার্যকর করতে।’ 

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন খালেদা জিয়া। সেই গণতন্ত্রকে আজ হত্যা করা হয়েছে। সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আজ হত্যা করা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বলার স্বাধীনতা চাই। আমরা আজ শপথ গ্রহণ করতে চাই, একাত্তরের স্বাধীনতার চেতনা পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অবরুদ্ধ। জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই। মুক্তচেতনার স্বাধীনতা নেই। সেই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করে সত্যিকার অর্থে একটি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।’

এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও হাবিব-উন-নবী সোহেলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

 


আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকহানাদার বাহিনী ও তার দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামস মিলিতভাবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বিনয় এবং শ্রদ্ধায় কাল জাতি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করবে। একই সাথে এবারও জাতির প্রত্যাশা, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের যারা হত্যা করেছে তাদের মধ্যে যারা বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে আছে অথবা পলাতক আছে তাদের বিচারের রায় কার্যকর করে দেশকে কলংকমুক্ত করা হবে। 
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা পেশাজীবী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, দিনব্যাপী বিভিন্ন সংগঠন শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা, মৌন মিছিল ইত্যাদি। এছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আতœার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। 
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতি এ বছর এমন একটি প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে যখন একাত্তরের সেই যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত অনেকের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। মানবতাবিরোধী হত্যা মামলায় দ-িত বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দ- কার্যকর হয়েছে। জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামান এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দন্ড কার্যকর হয়। তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় বিচার এখনও কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। তাদেরকে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদন্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। 
শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধুরীর সন্তান আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, ‘আমার পিতার হত্যাকান্ড এবং তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল চৌধুরী মইনুদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান। আমার বাবার হত্যার সাথে জড়িতদের রায় কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাছে বিজয়টা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।’ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার একমাত্র সন্তান মেঘনাগুহ ঠাকুরতা বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নায়কদের শাস্তি হয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি। এখনো কেউ কেউ বাকি আছে। চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামানের দন্ড কার্যকর করা যায়নি। বিদেশ থেকে তাদের ফেরত এনে বিচার কার্যকর করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে আমরা দাবি জানাই। তা না হলে বিজয়ের অর্জন পূর্ণাঙ্গ হবে না।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আল-বদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদারুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়। এ দু’টি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আল-বদর বাহিনী আরও অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আল-বদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেনÑ অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভিনসহ আরো অনেকে।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, একাত্তরে ত্রিশ লাখ শহীদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। তারা শহীদ হন এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসাবে। হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী তাদের পরাজয় আসন্ন জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে বুদ্ধিজীবী নিধনের এই পরিকল্পনা করে।
তারা স্পষ্ট দেখে- চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে- তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল। 
কর্মসূচি : সকালে রাজধানীর মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে সরকারিভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে।এর পরেই বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগ প্রতিবারের মত এবারও দেশবাসীর সাথে যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্য সহকারে এই শোকাবহ দিনটিকে স্মরণ ও পালন করবে।
এ উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ। সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন এবং ৭টা ৪৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। এছাড়াও সকাল সাড়ে ৮টায় রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। 
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আগামীকাল সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান-প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত এবং সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণস্থ কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণস্থ স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পু®পস্তবক অর্পণ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পু®পস্তবক অর্পণের উদ্দেশ্যে যাত্রা, বেলা ১১টায় উপাচার্যের সভাপতিত্বে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হবে। 
এছাড়াও জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ’৭১, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, উদীচী, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতিতে আগামীকাল শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে সংগঠনের কেন্দ্রের ন্যায় সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের সকল শাখা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।(Collected Copy)

13 December 2020

মারা গেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী।


ফুসফুসের জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূর হোসাইন কাসেমী।

রবিবার দুপুর সোয়া একটায় ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেস সেক্রেটারি মনির আহমেদ।

শ্বাসকষ্ট হওয়ায় পহেলা ডিসেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। গত বৃহস্পতিবার তার অবস্থার অবনতি হয়।

তবে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল বলে জানিয়েছেন মনির আহমেদ। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

গত ১৫ই নভেম্বর হেফাজতে ইসলামের সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয় নূর হোসাইন কাসেমীকে। তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তিনি এই সংগঠনের নায়েবে আমীর ও ঢাকা মহানগর আমীর ছিলেন।

এছাড়া বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন।

২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে বিশাল সমাবেশের পর থেকে 'হেফাজতে ইসলাম' নামটি ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

তবে হেফাজতের আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর পর থেকে দলটিতে বিভেদ দেখা দিয়েছে। এর মাঝেই গত নভেম্বর মাসে দলটির সম্মেলনে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের ভাস্কর্যবিরোধী কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবারো আলোচনায় এসেছিলেন নূর হোসাইন কাসেমী।

সজীব ওয়াজেদ হেফাজতকে 'রাজাকার' এর সাথে তুলনা করায় প্রতিবাদ -মামুনুল হকের-

 


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ 'হেফাজত নতুন রাজাকার হয়ে দাঁড়াচ্ছে' বক্তব্য দেয়ার পর ইসলামি সংগঠন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস বলছে, যদি তারা ক্ষমতায় আসে তাহলে ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা ছাড়া উপায় থাকবে না।

শুক্রবার রাতে 'ডিজিটাল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ১২ বছর' শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা এবং পুত্র সজীব ওয়াজেদ হেফাজতে ইসলামের সমালোচনা করেন।

আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার বক্তব্যে বলা হচ্ছে, একাত্তরে জামায়াত ইসলামের ভূমিকা এখন হেফাজতে ইসলাম নিচ্ছে।

বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস এর মহাসচিব মামুনুল হক, একই সাথে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করে বলেছেন ভাস্কর্য বিরোধিতার সাথে রাজাকার হওয়ার কোন সম্পর্ক নেই।

মি. হক বলছেন "ভাস্কর্য বিষয়ের সাথে রাজাকারের কোন সম্পর্ক আছে বলে আমরা মনে করি না। কুরআন,সুন্নাহ আলোকে ভাস্কর্য বা মূর্তি বা যেকোন প্রাণীর দেহ বিশিষ্ট অবয়ব সেটা ইসলাম গ্রহণ করে না। এটা রাজাকারের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না"।

তিনি বলেন "এটা রাজাকার বা স্বাধীনতার চেতনার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত না আদৌ"।

বাংলাদেশের ঢাকার ধোলাইপাড়ে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামপন্থী দলগুলোর কট্টর অবস্থানের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর টানাপোড়েন শুরু হয়।

আওয়ামী লীগের নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে থাকতে হলে বাংলাদেশের সংবিধান মানতে হবে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা আছে, আর ইসলামী দলগুলো ইসলামী অনুশাসন চাচ্ছে। মি. হানিফ বলছেন 'তারা একাত্তরের রাজাকারদের মানসিকতায় পোষণ করে'।

"মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করতে হলে আগে আপনাকে সংবিধান মানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যা অর্জন করেছিলাম স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সংবিধান, সেই সংবিধানে যেগুলা আছে সেগুলাই তো মানে না। এরা একাত্তরে রাজাকার ছিল, এখনো আছে। সেই মন-মানসিকতায় পোষণ করে" বলছিলেন মি. হানিফ।

এদিকে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস নামে একটি ইসলামি সংগঠন বলছে, তারা ক্ষমতায় গেলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার অবকাশ থাকবে না।

সংগঠনটির মহাসচিব মামুনুল হক, যিনি একই সঙ্গে হেফাজতের ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব, তিনি বলছেন, তারা একটা নিবন্ধিত সংগঠন হিসেবে রাজনীতিতে আছেন। যদি ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে ইসলামী আইন অনুসারে দেশে ভাস্কর্য রাখার অবকাশ থাকবে না।

তিনি বলছেন "আমি একটা নিবন্ধিত সংগঠন খেলাফত মজলিসের মহাসচিবের দায়িত্বে আছি, আমরা তো রাজনীতি করছি। এবং আমাদের অনেকগুলো ইসলামী সংগঠন বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধিত হয়ে রাজনীতি করছে"।

"আমাদের সকলের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং ঘোষণা হল আমরা দেশে রাষ্টীয় পর্যায়ে ইসলামকে বাস্তবায়ন করতে চাই। আমাদের সেই প্রচেষ্টা সফল হলে, ইসলামি হুকুমত বাস্তবায়িত ত হলে ভাস্কর্য সরিয়ে না ফেলার কোন অবকাশ থাকবে না" বলছিলেন মামুনুল হক।

12 December 2020

চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

 


দেশে চলমান ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। দেশে ধর্মীয় যেকোনও ইস্যুকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে ওঠে কিছু গোষ্ঠী বা ব্যক্তি। অনলাইন থেকে প্রকাশ্যে সবখানেই তাদের তৎপরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে কুষ্টিয়া পৌর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুসূদন স্মৃতি ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন ভাস্কর্য ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদারের পাশাপাশি এলাকাভিত্তিক উগ্রপন্থিদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে পুলিশ। বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের তৎপরতা পরিলক্ষিতও হচ্ছে। 


বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা যেমন- পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) সারা দেশেই গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের সব ভাস্কর্য ভাঙার দাবি তুলে আসছিলেন কওমি বা দেওবন্দি হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ। প্রথম দিকে তারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ধীরে ধীরে দেশের সব ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার দাবি তোলে। এছাড়া নতুন কোনও ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবে না বলেও হুমকি দেয় এসব সংগঠনের নেতারা। ২০০৮ সালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গোল চত্বরে লালনের ভাস্কর্য নির্মাণের সময় ধর্মভিত্তিক দলগুলোর আপত্তির মুখে সরিয়ে ফেলা হয়। ২০১৭ সালে একই গোষ্ঠীর দাবির মুখে হাইকোর্ট এলাকা থেকে গ্রিকদেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই ভাস্কর্যবিরোধী উগ্রপন্থিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

গত বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে স্থাপিত মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যের একটি কান ভেঙে ফেলে দুর্বৃত্তরা। কুষ্টিয়া পৌর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবসহ অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে ভাস্কর্যবিরোধী নানা ধরণের তৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে উগ্রপন্থিরা। যদিও এসব উগ্রপন্থির সঙ্গে দেশের নিষিদ্ধঘোষিত কোনও জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি জঙ্গিবাদ ও জঙ্গি কর্মকাণ্ড অনুসরণকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)।

এদিকে, কুষ্টিয়ার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য ভাঙার অভিযোগে আবু বকর, নাহিদ, আলামিন ও ইউসুফ নামের চারজনকে আটক করা হয়েছে। সবাই ইবনে মাসউদ মাদ্রাসার ছাত্র। মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তারা স্বীকার করেছে, বিভিন্ন সময় তারা ইউটিউবে বিভিন্ন ওয়াজ শুনে ভাস্কর্য ভাঙার বিষয়ে উৎসাহ পায়। ভাস্কর্য নাজায়েজ—এ চেতনা থেকেই কুষ্টিয়ায় ভাস্কর্যটি ভাঙচুর করে তারা। তাদের এ কাজে উৎসাহ দিয়েছে কয়েক ব‌্যক্তি, যারা উগ্র মৌলবাদে বিশ্বাসী। তারা বিভিন্ন সময় দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। ইতোমধ্যে তাদের ব্যাপারে পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তদন্তে নেমেছে। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের তালিকা করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, ভাস্কর্য ইস্যু নিয়ে সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে মাঠে নেমেছে ধর্মান্ধ মৌলবাদী একটি গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী কৌশলে সাধারণ মানুষের মনে ভাস্কর্য নিয়ে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে মৌলবাদী গোষ্ঠীটি মনগড়া কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে চলছে। 

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। একদিকে ধর্মীয় বিষয়, আরেক দিকে জাতির জনক বন্ধবন্ধুর প্রতিকৃতি। এ কারণে অনেক সাবধানে বিষয়টি হ্যান্ডেল করা হচ্ছে। তবে কেউ ভাস্কর্য বিনষ্ট করার মতো কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) সহকারি পুলিশ সুপার (লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া) ওয়াহিদা পারভীন ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘অনলাইন থেকে যেসব প্রোপাগাণ্ডা ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো আমাদের সাইবারের কয়েকটি উইং মনিটরিং করছে। দেশে ধর্মকে পুঁজি করে জঙ্গিবাদে জড়িত হওয়া কিংবা যারা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে, তাদেরকেও নিয়মিত নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যারা এসব ব্যাপারে উস্কানি দিয়ে জঙ্গিবাদের দিকে অথবা সহিংসতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে এটিইউ কাজ করছে।’

পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘আমরা জনগণকে অনুরোধ করছি ধর্মের কোনও ভুল ব্যাখ্যা দি‌য়ে তা‌দের‌কে যে‌নও কেউ বিভ্রান্ত কর‌তে না পা‌রে। কো‌নও স্বার্থা‌ন্বেষী মহ‌লের হীন স্বার্থ চ‌রিতার্থ কর‌তে তা‌দের‌কে যে‌নও কা‌জে লাগা‌তে না পা‌রে। জাতীয় স্বা‌র্থে দেশের আইনের প্রতি প্রত্যেককে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘যারা দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে, তাদের প্রতি নজর রাখা হচ্ছে। বাংলা‌দেশ পু‌লিশ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত কর‌তে বদ্ধপ‌রিকর।’

কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ ফ ম আল কিবরিয়া ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ভাস্কর্য ইস্যুতে যারা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, তাদের ফেসবুক আইডি, পেজ ও গ্রুপ আমাদের নজরদারিতে আছে। আইডিগুলো শনাক্তের পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভাস্কর্য ইস্যুতে যারা সক্রিয় হয়ে উঠেছে এখন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে নিষিদ্ধ কোনও জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নজরদারির মধ্যে রয়েছে।’

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুসূদন স্মৃতি ভাস্কর্য ভাঙচুরকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সম্ভাব্য ভাঙচুরকারী ও উগ্রপন্থিদের তালিকা করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় বিভিন্ন ভাস্কর্যকেন্দ্রিক গোয়েন্দা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’

সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার, ‘তাদের সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী নয়। তাদের সিংহভাগই আবেগের স্রোতে গা ভাসিয়েছে। এই আবেগপ্রবণ মানুষদের কারা ব্যবহার করছে, সেটাই সাইবার পুলিশ নজরদারি করছে এবং নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছে। তালিকাটা খুব দীর্ঘ নয়, ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। 

তারা আরও জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা অনলাইনে পোস্ট প্রদানকারীদের মাধ্যমে আইন ভঙ্গ হচ্ছে কি-না তা যাছাই করে ফেসবুক বা ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হচ্ছে।

সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিটের বিশেষ সুপার মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য একটি গ্রুপ সক্রিয় হয়েছে। তাদেরকে নজরদারিতে রেখেছে সিআইডি। এরমধ্যে ২০-২৫টি ফেসবুক আইডি শনাক্ত করা হয়েছে। এই আইডিগুলো দেশে-বিদেশে থেকে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে।’ 

জানতে চাইলে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ ব্রেকিংনিউজকে বলেন, ‘চলমান ভাস্কর্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে যে ধরণের উস্কানি কিংবা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, এ ব্যাপারে র‍্যাব তিনটি স্তরে অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছে। প্রথম স্তরটি- সাদা পোশাকে সারা দেশে র‍্যাবের গোয়েন্দারা নিয়োজিত আছে। দ্বিতীয়ত- পোশাকধারী সদস্যরা টহল কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। সর্বোপরি কেউ যাতে অনলাইনের মাধ্যমে কোনও ধরণের বিভ্রান্তি উস্কে দিতে না পারে, সে লক্ষ্যে সাইবার মনিটরিং টিম সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত আছে।’ এছাড়া যেকোনও ধরণের বিশৃঙ্খলমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পেলে র‍্যাব কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

দেশে করোনায় নতুন করে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ছাড়াল

 


করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩২৯ জন।


শনিবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে স্বাস্থ্য অধিদফতর এক বুলেটিনে দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ পরিস্থিতির সর্বশেষ এই তথ্য জানিয়েছে।  

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন শনাক্ত ১ হাজার ৩২৯ জনকে নিয়ে দেশে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৭৮ জন। আরও ৩৪ জনের মৃত্যুতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ২০ জন হয়েছে।

গত একদিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ১৮৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৫০৩ জন হয়েছে। 

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। এর ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর খবর আসে। 

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। এটি বর্তমানে বিশ্বের ২১৩ দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ১১ মার্চ কোভিড ১৯ কে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বস্থ্য সংস্থা।